নির্বাচনের আগে গণহত্যার বিচার শহীদ পরিবারের দাবি উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার শেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব। সরকার সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আবারো ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে। সেজন্যই জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ছিল এবং আছে। গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকারকে যে কোনো সহযোগিতা জামায়াতে ইসলামী করবে। শহীদের নিজ দলের কর্মী দাবি করা দল কতজন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে—প্রশ্ন রেখে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদ এবং আহতদের দলীয় সম্পদে রূপ দেয়নি, দিবে না। জামায়াতে ইসলামীর স্পষ্ট ঘোষণা—প্রত্যেক শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীরা আমাদের জাতীয় বীর, জাতীয় সম্পদ। সেজন্য জামায়াতে ইসলামী শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা এবং আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন দলমত নির্বিশেষে চালিয়ে আসছে। আগামীতেও সেই ধারা অব্যাহত রাখবে। এসময় তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে, অন্য কোনো দল কিংবা রাষ্ট্র সেইভাবে দাঁড়ায়নি, দাঁড়াতে পারেনি।


শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদানপূর্বক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যত নিপীড়ন চালিয়েছে, জনগণ ততই প্রতিবাদী আর বিক্ষুব্ধ হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে জনগণের উপর গণহত্যা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ।


জুলাই আন্দোলনে জামায়াতের আমীর বিদেশ থেকে দেশে ছুটে এসেছেন আর আওয়ামী লীগ দেশ থেকে পালিয়ে গেছে উল্লেখ করে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমীর বিদেশে ব্যক্তিগত কাজে অবস্থান করায় দিনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে দেশে ছুটে আসেন। আমীরে জামায়াত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে দলীয় সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার সহযোগিতায় কাজ করে। ঢাকা মহানগরীতে বিনামূল্যে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স এবং বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। খুনি হাসিনা ঐ আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার কথা স্বীকার করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। জামায়াতে ইসলামী দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দুর্বার গতিতে রূপান্তরিত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়েছে। দলকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আলাদা কোনো কর্মসূচি সেই সময় দেওয়া হলে, আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে গণহত্যা আরো জোরালো করার সুযোগ পেত। কিন্তু আওয়ামী লীগকে সেই সুযোগ দেয়নি জামায়াতে ইসলামী।

সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির বলেন, শহীদ পরিবারকে শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, শহীদদের শূন্যতা পূরণে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে। যারা ক্ষমতার জন্য গণহত্যা চালিয়ে চোরের বেশে পালিয়ে যায়, তারা কখনো বীরের বেশে ফিরে আসে না, আসতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ বীরের বেশে ফাঁসি বরণ করেছে কিন্তু দেশ থেকে পালিয়ে যায়নি। তাই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করবে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিজ দেশের জনগণকে নির্মমভাবে হত্যা করার ইতিহাস আওয়ামী লীগ রচনা করেছে। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের সরকার ছিল না, আওয়ামী লীগ ভারতের তাঁবেদারি সরকার ছিল। আওয়ামী লীগের পতন ভারত মেনে নিতে পারছে না। সেজন্য ভারত এখন বাংলাদেশ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সকল ষড়যন্ত্র এদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী রুখে দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মহানগরীর কর্মপরিষদের সদস্য যথাক্রমে মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, আবদুস সালাম, কামরুল আহসান হাসান, শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমনসহ মহানগরীর নেতৃবৃন্দ।
সভা শেষে ২১টি শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি পরিবারকে দ্বিতীয় কিস্তির ১ লাখ টাকা করে এবং নতুন ৬টি শহীদ পরিবারকে নগদ ২ লাখ টাকা করে অনুদান তুলে দেওয়া হয়।